সাবেক ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া পরিচয়ে প্রতারণা করে অভিনেত্রী ও গায়িকা মেহের আফরোজ শাওনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া সেই প্রতারক মো. রবিউল ইসলামের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
শুক্রবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল ইসলাম এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক শরিফুল ইসলাম।
এদিন প্রতারক রবিউলকে আদালতে হাজির করে তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত রবিউলের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
যেভাবে প্রতারণার ফাঁদে পড়েন শাওন
হুমায়ূন আহমেদের হাতেগড়া নুহাশ পল্লীর উন্নয়ন বাবদ অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছে বড় অংকের ফান্ড। অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা থাকা সেই ফান্ড উত্তোলনের জন্য সরকারি ফি ৩১,৮৫০ টাকা। ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া পরিচয় দিয়ে অভিনেত্রী-গায়িকা মেহের আফরোজ শাওনকে ফোনে এমনটাই জানানো হয়। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিবের ফোন নম্বর দিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়।
এটি যে একটি প্রতারণার ফাঁদ, সরল বিশ্বাসী শাওন তা বুঝতে পারেননি। সেই ফাঁদে পা দিয়ে ভুয়া উপসচিবের কথা মতো তাকে ৩২ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। টাকা পাঠানোর পর শাওন কল দেন সেই ভুয়া উপসচিবের নম্বরে। কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে শাওনের কানে ভেসে আসে, ‘কাঙ্ক্ষিত নম্বরটিতে এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’ শাওনের আর বুঝতে বাকি থাকে না, যে তিনি প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন।
যেভাবে গ্রেপ্তার হন প্রতারক রবিউল
ঘটনার পরই নুহাশ পল্লীর ম্যানেজার বাদী হয়ে রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় একটি প্রতারণা মামলা করেন। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ একজনের সংশ্লিষ্টতা পায়। এরপর অভিযানে নেমে বুধবার (২৪ আগস্ট) দিবাগত রাত দেড়টায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানা এলাকা থেকে রবিউল ইসলাম (৪১) নামে এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
এসময় ওই প্রতারকের কাছ থেকে প্রতারণা কাজে ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন ও চারটি সিম কার্ড জব্ধ করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকালে গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান অর্গানাইজড ইনভেস্টিগেশন টিম লিডার অতিরিক্ত কমিশনার মো. নাজমুল হক।
তিনি জানান, প্রতারক রবিউল ২০১৯ সাল থেকে বিভিন্ন কৌশলে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তাদেরকে কখনো ডেপুটি স্পিকার, কখনো বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সী ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব পরিচয় দিয়ে ফোন করতেন। বিদেশি অনুদানের প্রলোভন দেখিয়ে সরকারি ভ্যাট, ট্যাক্স ও প্রসেসিং ফি-এর নামে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে মোবাইল বন্ধ করে রাখতেন। এভাবে তিনি শতাধিক মানুষের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, ‘প্রতারক রবিউলের নামে আরও বেশ কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে। এ পর্যন্ত তিনটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। আরও মামলা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
অন্যদিকে শাওন বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘রবিউল ফোন করে এমনভাবে কৌশলে কথা বলেছে যে আমি তার প্রতারণা ধরতে পারিনি। যাচাই না করে টাকা পাঠানো আমার ভুল হয়েছে।’এ এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে সাবধান থাকবেন বলেও জানান হুমায়ূন-পত্নী।
সূএ: ঢাকাটাইমস ডটককম